পেটের মেদ আমাদের জন্য একটি বিব্রতকর বিষয়, শুধু উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খেলেই যে আমাদের পেটের মেদ বেড়ে যায় তা কিন্তু নয়। বেশি ক্যালরিযুক্ত যেকোন খাবারে আমাদের পেটের মেদ বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেকেরই ধারণা আমাদের পেটে একবার মেদ জমে গেলে সেটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। এটা একটি ভুল ধারণা মাত্র। আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলে পেটের মেদ সহজেই কমিয়ে ফেলা সম্ভব। সবার আগে আমাদের এটা জানা জরুরি যে কোন ধরনের খাবার খেলে আমাদের পেটে মেদ জমতে পারে। সাধারণত মদ্যপান, মিষ্টিজাতীয় অতিরিক্ত খাবার, তেলে ভাজা খাবার, কোমল পানীয়, অস্বাস্থ্যকর বাহিরের খাবার, লাল মাংস, ইত্যাদি আমাদের পেটের মেদ বাড়িয়ে তোলার পেছনে ভূমিকা রাখে।
ওয়ের্ক ফোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলেন। যখন আমরা একই তেল বারবার ব্যবহার করে থাকি, তখন সেখানে ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হতে পারে বলে তাদের ধারণা। আর এই ট্রান্সফ্যাট আমাদের পেটের মেদ বাড়িয়ে দিতে পারে। আমাদের পেটের মেদ অতিরিক্ত জমে যাওয়ার আগেই আমরা চাইলে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমরা নিয়ন্ত্রিত খাদ্য অভ্যাস ও সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা চাইলেই শরীরে জমে যাওয়া বাড়তি মেদ। এবং ভুরি হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারি। চলুন তাহলে আমরা জেনে নেই আমাদের পেটের মেদ এবং ভুড়ি থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কি করা উচিত।
প্রথমত আমাদের খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন লাল চাল বা লাল আটার তৈরি খাবার খাওয়া এবং শাকসবজি ও ফলমূল জাতীয় খাবারে মিলবে আঁশ। গ্রীন টিতে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা আমাদের পেটের মেদ কমাতে খুব বেশি সাহায্য করে। তাই আমাদের দুধ ও চিনি দিয়ে চা পানের অভ্যাস বদলে নিতে হবে গ্রিন টিতে। এবং আখরোট, কাঠ বাদাম ও সামুদ্রিক মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের উৎস। তাই এসব খাবার আমাদের পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। সেই সাথে আমরা ঝাল খাবার খাব তাহলে আমাদের পেটের মেদ কমে যাবে। অবাক হচ্ছেন? অবাক হবেন না। আমরা ঝাল খাবার খাব কিন্তু সেই ঝাল খাবার আসবে দারচিনি, আদা, গোলমরিচ, এবং কাঁচামরিচ থেকে।
এসব আমরা রান্নায় ব্যবহার করে থাকি। আর এই মসলা স্বাস্থ্যকর ও পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। সেই সাথে আমরা কাঁচা রসুনের কোয়া কোয়া সকালবেলা চুষে খাব। আর এই অভ্যাসের ফলে দ্রুত আমাদের ওজন কমবে আর সেই সাথে আমাদের পেটের মেদ কমবে। কাঁচা রসুন আমাদের শরীরের রক্তপ্রবাহ সহজ করে। আর আমাদের পেটে মেদ জমতে দেয় না। এবং পেটের মেদ কমাতে সকালে শুধু এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। এতে আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকবে এবং আমাদের শরীরের মেদ জমার প্রক্রিয়া ধীর হবে। আমাদের অতিরিক্ত চিন্তা ও উদ্যোগের ফলে ও কোমরের চারপাশে বা আমাদের পেটে মেদ জমতে পারে। তাই আমাদের ভুড়ি কমাতে অবশ্যই চিন্তা মুক্ত জীবন যাপন করতে হবে।
অনেকেই আমরা খাবার খাওয়ার পর বসে থাকি বা শুয়ে পড়ি। তাই আমাদের সঠিকভাবে খাবার পরিপাক হয় না। ফলে আমাদের পেটে চর্বি জমতে থাকে। তাই আমাদের খাবার খাওয়ার পর একটানা শুয়ে বসে না থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা দরকার। আমরা যারা সারাদিন টেবিল চেয়ারে বসে কাজ করি, তাদের পেটে সহজে মেদ জমে যায়। তাই আমাদের ঘুড়ি গোল হতে শুরু করে। তাই আমাদের উচিত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বসে কাজ করার পরে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা। আমরা একবারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করে অল্প অল্প করে খাবার গ্রহণ করব। আমরা সারা দিনে অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় খাবারকে ৫ থেকে ৬ বারে গ্রহণ করব।